আমার এক বন্ধু, সে ষষ্ঠ শ্রেনী থেকেই আমার বন্ধু। নামটা ঠিক মনে আসছে না। একসাথে পড়েছি অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত। তারপর কি যেনো হলো, সে লেখাপড়া ছেড়ে দিলো। তাদের পরিবার ধ্বনী নয়, মধ্যবিত্ত ও হয়তো নাও হতে পারে। তারা ছিলো পারিবারিক অবস্থায় গরিব। হয়তবা অর্থের অভাবে তাকে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে হয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত ঝড়ে যায় সে। বঞ্চিত হয় পড়ালেখা থেকে। ছাত্র হিসেবে পুরোপুরি ভালো না হলেও মোটামুটি ভালোই ছিলো। আমার মনে হয় সে যদি ভালোভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতো তাহলে নিশ্চিত সে ছাত্র হিসেবে মোটামুটি থেকে ভালো ও ভালো থেকে আরও ভালো হয়ে যেতো। আমি যখন এসএসসি পরীক্ষা দেই, তখন দেখি সে এক হোটেলে মেসিয়ারি করতেছে। আমার খুবই খারাপ লেগেছিলো। যে বয়স'টা তার পড়ালেখার সেই বয়সে সে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে এ পথে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম; 'কিরে তুই এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিস না?' 'না'রে তোরা তো মেট্রিক পাশ করতেচিস, আমি বিয়ে পাশ করেছি অনেক আগেই' আমার আরও বেশি খারাপ লেগেছিলো এ জায়গায়। কারণ সে পরীক্ষা'টাও দিচ্ছে না, এখন তো স্কুল না গিয়েও স্কুলে যোগাযোগ করে রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ করে পরীক্ষা দেয়া যায়। তার চেয়ে বড় কথা এই বয়সেই সে বিয়ে করে ফেলেছে। আমার এরকম অনেক কয়েকজন ঝরে পড়া বন্ধু ছিলো। আরেকজন বন্ধু তারও নাম মনে নেই, সে তো পড়ালেখা সপ্তম শ্রেনীতেই বাদ দিয়েছিলো। প্রধান কারণ পারিবারিক সাচ্ছল্যতা। ফলে তাকে পড়ালেখার বয়সেই, পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে কি যেনো এক জায়গায় কাজ করা শুরু করে দিলো। একদিন হঠাৎ করে সাইকেলে যেতে তার সাথে দেখা, আমি বললাম; 'তুই জেএসসি দিবি না?' সে বললো; 'দিতে তো চাই, দেখি চেষ্টা করবো। রেজিষ্ট্রেশন ফী যোগার হলে।' 'পড়ালেখা ছেড়ে দিলি কেন?' 'তাছাড়া যে কোনো উপায় ছিলো না, আমরা গরীব। তাছাড়া মেধাশূন্য। পড়ালেখায় ভালো পারি না। তবে পড়ালেখা ছেড়ে ভুলই করেছি। সবই নিয়তি'। আমার আরেকজন বন্ধুর কথা না বললেই নয়। নাম মনে নেই। সে ছাত্র হিসেবে অনেক ভালো ছিলো। তার হাতের লেখাও ছিলো দারুন। গানের গলাও ছিলো চমৎকার। আমাদের কনিকা ম্যাডাম প্রায়ই তাকে বলতেন গান করতে, সে সেচ্ছায় দাড়িয়ে গান করতো। আমাদের ক্লাসের গায়ক হিসেবে সে পরিচিত ছিলো। আমার কাছ থেকেও সেই ম্যাডাম কবিতা শুনতো। নিজের লেখা কবিতা পাঠ করে শুনাতাম। কবি হিসেবে আমিও পরিচিত ছিলাম। কখনো কবি, কখনো বিজ্ঞানী আবার কখনোবা ইংলিশ ম্যান। হঠাৎ করে সপ্তম শ্রেনীর মাঝামাঝি এসে আমার সেই বন্ধু'টি স্কুলে আশা বন্ধ করে দেয়। আমরা ক্লাসের কেউ জানতাম না কেনো সে স্কুলে আসতেছে না। মিস করতে লাগলাম তাকে ও তার গানের গলা। পরে হঠাৎ করে শুনতে পেলাম সে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। আমরা অবাক হয়ে গেছিলাম। এতো ভালো একটা ছাত্র, এতো ভালো একটা ছেলে যার গানের গলাও চমৎকার। সে কিনা লেখাপড়া ছেড়ে দিলো! আমাদের কনিকা ম্যাডামের মনটা তখন একটু খারাপ হয়ে গেছিলো। তার মতো সুর করে কেউ গান করতে পারতো না আমাদের ক্লাসের। আমরা জানতে পারি সে কাঠমিস্ত্রীর কাজে যোগ দিয়েছে। আর্থিক অবস্থার কারণে তাকে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে হয়। আমার ঝরে পড়া বন্ধুরা ইচ্ছা করলেই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারতো। এটা অবস্যি তাদের দোষ নয়। কারণ তাদের অনুপ্রেরণা দেয়ার কেউই ছিলো না। বড় শক্তিটাই তারা পায়নি। তোমাদের যারা আর্থিক অবস্থা খারাপ। পড়ালেখার সামর্থ নেই বলে মনে করো। ছেড়ে দেয়া অবস্থা। ভুলেও পড়ালেখা ছেড়ে দিবে না। পড়ালেখা ছেড়ে দিচ্ছো তো কপালে ফাটাবাশ জুটাচ্ছো। কাজেই কষ্ট করে হলেও পড়ালেখা চালিয়ে যাও। এখন তো কাজের পাশাপাশি পড়ালেখা'কে চালিয়ে যাওয়া যায়। খুবই আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে শিক্ষক'কে বলো। হয়তোবা তারা সাহায্য করতেও পারে। স্কুলের বেতন বাতিল করে কিংবা উপবৃত্তি দিয়ে। প্রয়োজনে কোনো একটা কাজে যোগ দাও। সেখান থেকে যে অর্থ টুকু আসবে সেটুকু থেকে পরিবারে ও পড়ালেখার জন্য চালিয়ে নাও। মনে হতে পারে, স্কুলে না গেলে তো প্রধান শিক্ষক স্কুলেই রাখবে না। সেজন্য প্রধান শিক্ষক'কে বলে রাখো যে তুমি স্কুলে নিয়মিত আসতে পারবে না। তোমার অবস্থার কথা বলো। শিক্ষা ব্যবস্থা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। কাজেই শিক্ষক'রা না করবেন না। আবার এও মনে হতে পারে যে এতে পড়ালেখা খারাপ হবে। কারন পড়ালেখার সময় থাকছে না। এই ধারণাটা ভুল। রাতে ২ ঘন্টা পড়, সকালে ২ ঘন্টা পড় অথবা রুটিন করে পড়ো। প্রথম দিকে সমস্যা হতে পারে, কিন্তু পরে দেখবে আর হচ্ছে না। অনেকেই এভাবে পড়েছে, এবং তারা বুয়েট, ঢাবি কিংবা সাস্টের মতো শুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও চাঞ্জ পেয়েছে। কাজেই ভয়ের কোনো কারণ নেই, নিরাশ হবে না। যেকোনো প্রকারে চালিয়ে যাও নিজের পড়ালেখা। কখনো ঝড়ে পড়ো না। আর তোমাদের কাছে একটা অনুরোধ, তোমরা 'দুষ্টু ছেলের দল' ও 'আমি তপু' নামের চমৎকার দুইটা বই আছে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের লেখা। তার এই বই দুইটা সংগ্রহ করে পড়ার অনুরোধ রইলো। 'আনন্দের হোক শিক্ষা জীবন'
নাজির হোসেন
২৫/০২/২০২০
______________________________
আমার এক বন্ধু, সে ষষ্ঠ শ্রেনী থেকেই আমার বন্ধু। নামটা ঠিক মনে আসছে না। একসাথে পড়েছি অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত। তারপর কি যেনো হলো, সে লেখাপড়া ছেড়ে দিলো।
তাদের পরিবার ধ্বনী নয়, মধ্যবিত্ত ও হয়তো নাও হতে পারে। তারা ছিলো পারিবারিক অবস্থায় গরিব। হয়তবা অর্থের অভাবে তাকে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে হয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত ঝড়ে যায় সে। বঞ্চিত হয় পড়ালেখা থেকে।
ছাত্র হিসেবে পুরোপুরি ভালো না হলেও মোটামুটি ভালোই ছিলো। আমার মনে হয় সে যদি ভালোভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতো তাহলে নিশ্চিত সে ছাত্র হিসেবে মোটামুটি থেকে ভালো ও ভালো থেকে আরও ভালো হয়ে যেতো।
আমি যখন এসএসসি পরীক্ষা দেই, তখন দেখি সে এক হোটেলে মেসিয়ারি করতেছে। আমার খুবই খারাপ লেগেছিলো। যে বয়স'টা তার পড়ালেখার সেই বয়সে সে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে এ পথে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম;
'না'রে তোরা তো মেট্রিক পাশ করতেচিস, আমি বিয়ে পাশ করেছি অনেক আগেই'
আমার আরও বেশি খারাপ লেগেছিলো এ জায়গায়। কারণ সে পরীক্ষা'টাও দিচ্ছে না, এখন তো স্কুল না গিয়েও স্কুলে যোগাযোগ করে রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ করে পরীক্ষা দেয়া যায়। তার চেয়ে বড় কথা এই বয়সেই সে বিয়ে করে ফেলেছে।
আমার এরকম অনেক কয়েকজন ঝরে পড়া বন্ধু ছিলো। আরেকজন বন্ধু তারও নাম মনে নেই, সে তো পড়ালেখা সপ্তম শ্রেনীতেই বাদ দিয়েছিলো। প্রধান কারণ পারিবারিক সাচ্ছল্যতা। ফলে তাকে পড়ালেখার বয়সেই, পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে কি যেনো এক জায়গায় কাজ করা শুরু করে দিলো। একদিন হঠাৎ করে সাইকেলে যেতে তার সাথে দেখা, আমি বললাম;
'তুই জেএসসি দিবি না?'
সে বললো;
'দিতে তো চাই, দেখি চেষ্টা করবো। রেজিষ্ট্রেশন ফী যোগার হলে।'
'পড়ালেখা ছেড়ে দিলি কেন?'
আমার আরেকজন বন্ধুর কথা না বললেই নয়। নাম মনে নেই। সে ছাত্র হিসেবে অনেক ভালো ছিলো। তার হাতের লেখাও ছিলো দারুন। গানের গলাও ছিলো চমৎকার। আমাদের কনিকা ম্যাডাম প্রায়ই তাকে বলতেন গান করতে, সে সেচ্ছায় দাড়িয়ে গান করতো। আমাদের ক্লাসের গায়ক হিসেবে সে পরিচিত ছিলো। আমার কাছ থেকেও সেই ম্যাডাম কবিতা শুনতো। নিজের লেখা কবিতা পাঠ করে শুনাতাম। কবি হিসেবে আমিও পরিচিত ছিলাম। কখনো কবি, কখনো বিজ্ঞানী আবার কখনোবা ইংলিশ ম্যান।
হঠাৎ করে সপ্তম শ্রেনীর মাঝামাঝি এসে আমার সেই বন্ধু'টি স্কুলে আশা বন্ধ করে দেয়। আমরা ক্লাসের কেউ জানতাম না কেনো সে স্কুলে আসতেছে না। মিস করতে লাগলাম তাকে ও তার গানের গলা। পরে হঠাৎ করে শুনতে পেলাম সে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। আমরা অবাক হয়ে গেছিলাম। এতো ভালো একটা ছাত্র, এতো ভালো একটা ছেলে যার গানের গলাও চমৎকার। সে কিনা লেখাপড়া ছেড়ে দিলো! আমাদের কনিকা ম্যাডামের মনটা তখন একটু খারাপ হয়ে গেছিলো। তার মতো সুর করে কেউ গান করতে পারতো না আমাদের ক্লাসের। আমরা জানতে পারি সে কাঠমিস্ত্রীর কাজে যোগ দিয়েছে। আর্থিক অবস্থার কারণে তাকে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে হয়।
আমার ঝরে পড়া বন্ধুরা ইচ্ছা করলেই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারতো। এটা অবস্যি তাদের দোষ নয়। কারণ তাদের অনুপ্রেরণা দেয়ার কেউই ছিলো না। বড় শক্তিটাই তারা পায়নি।
তোমাদের যারা আর্থিক অবস্থা খারাপ। পড়ালেখার সামর্থ নেই বলে মনে করো। ছেড়ে দেয়া অবস্থা। ভুলেও পড়ালেখা ছেড়ে দিবে না। পড়ালেখা ছেড়ে দিচ্ছো তো কপালে ফাটাবাশ জুটাচ্ছো। কাজেই কষ্ট করে হলেও পড়ালেখা চালিয়ে যাও।
এখন তো কাজের পাশাপাশি পড়ালেখা'কে চালিয়ে যাওয়া যায়। খুবই আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে শিক্ষক'কে বলো। হয়তোবা তারা সাহায্য করতেও পারে। স্কুলের বেতন বাতিল করে কিংবা উপবৃত্তি দিয়ে।
প্রয়োজনে কোনো একটা কাজে যোগ দাও। সেখান থেকে যে অর্থ টুকু আসবে সেটুকু থেকে পরিবারে ও পড়ালেখার জন্য চালিয়ে নাও।
মনে হতে পারে, স্কুলে না গেলে তো প্রধান শিক্ষক স্কুলেই রাখবে না। সেজন্য প্রধান শিক্ষক'কে বলে রাখো যে তুমি স্কুলে নিয়মিত আসতে পারবে না। তোমার অবস্থার কথা বলো। শিক্ষা ব্যবস্থা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। কাজেই শিক্ষক'রা না করবেন না।
আবার এও মনে হতে পারে যে এতে পড়ালেখা খারাপ হবে। কারন পড়ালেখার সময় থাকছে না। এই ধারণাটা ভুল। রাতে ২ ঘন্টা পড়, সকালে ২ ঘন্টা পড় অথবা রুটিন করে পড়ো। প্রথম দিকে সমস্যা হতে পারে, কিন্তু পরে দেখবে আর হচ্ছে না। অনেকেই এভাবে পড়েছে, এবং তারা বুয়েট, ঢাবি কিংবা সাস্টের মতো শুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও চাঞ্জ পেয়েছে। কাজেই ভয়ের কোনো কারণ নেই, নিরাশ হবে না। যেকোনো প্রকারে চালিয়ে যাও নিজের পড়ালেখা। কখনো ঝড়ে পড়ো না। আর তোমাদের কাছে একটা অনুরোধ, তোমরা 'দুষ্টু ছেলের দল' ও 'আমি তপু' নামের চমৎকার দুইটা বই আছে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের লেখা। তার এই বই দুইটা সংগ্রহ করে পড়ার অনুরোধ রইলো।
'আনন্দের হোক শিক্ষা জীবন'
COMMENTS