বই রিভিউ – আদর্শ হিন্দু হোটেল

বইয়ের নাম – আদর্শ হিন্দু হোটেল

লেখক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রকাশনী – দে’জ পাবলিশিং

পৃষ্টা সংখ্যা – ২০০

বিভূতিভূষণের আদর্শ হিন্দু হোটেল উপন্যাস’টি একজন সরল ঠাকুরের বিশ্বাস আর ভালোবাসার জোরে স্বপ্নপূরণের।

যাতে বামুন, রানাঘাটের স্টেশনের রেলবাজারের বেচু চক্কত্তির ক্ষুদ্র এক হোটেলের সহজ সরল রাঁধুনি হাজারি চক্রবর্তী। সে এখানে মাসে সাত টাকা করে মাইনে পায়। হাজারি চক্রবর্তী এখানে আসার পর হোটেল খানার বেশ উন্নয়ন হয়েছে। হোটেলে খাবারের ধরণ তিন রকমের ফার্স্ট ক্লাস সেকেণ্ড ও থার্ড। টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয়।

হাজারি ঠাকুরের রান্নার স্বাদ এতটাই ছিল যে, কেউ একবার খেলে দ্বিতীয় বার যে আসবেনা তা বলা মুশকিল। রানাঘাট সহ তার নাম ছড়িয়ে পড়েছিল সুদূর কলকাতা পর্যন্ত। তার রান্না খাওয়ার জন্য খদ্দেরের ভিড় জমে যেত হোটেলে।

সেই হোটেলে কাজ করতো পদ্মঝি নামের এক মেয়ে। সে প্রায়ই হোটেলের খাবার চুরি করত। খদ্দেরের সাথে প্রতারণা করত। কিন্তু হাজারি এইগুলি সহ্য করতনা, এর বিপক্ষে ছিল সবসময়। কিন্তু কিছু বলতে পারত না। কারণ বেচু চক্কত্তির কাছে নালিশ করলে সব দোষ তার উপরেই পরে। পদ্মঝি এ কারণে হাজারি ঠাকুর’কে দেখতে পারত না। অপমান ও উপহাস করত সবসময়।

হাজারি ঠাকুর স্বপ্ন দেখত সে ও একদিন বেশ বড় হোটেল খুলবে। এই রেল বাজারেই। সে কখনই খদ্দের’কে পচা বাসি খাবার খেতে দিবে না। সে নিজে রান্না করে খাওয়াবে। মানুষকে শান্তি করে খাওয়াবে। তার হোটেলে রেস্ট হাউজ থাকবে। দুরের যাত্রীরা হোটেলে এসে বসে রেস্ট নিবে। তাঁদের জন্য আলাদা ভাবে খাবার থাকবে ফ্রীতে। সততার সাথে সে হোটেল চালাবে। হাজারি ঠাকুর বেচু’র হোটেলে থেকে ব্যবসার বেশ নিয়ম কানুন শিখেছে। তার থেকেও বেশি। কিন্তু একদিন হোটেলের বাসন চুরি হয়ে যায়, পুলিশ তাকে সন্ধেহ করে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পুলিশ কোনো প্রমান না পেয়ে কয়েকদিনের মধ্যে ছেঁড়ে দেয়।

কিন্তু সে হোটেলের চাকরিটা হারায়। ফলে এ গ্রাম থেকে ও গ্রাম ঘুরতে থাকে। সেই সময় এক গ্রামের এক বাড়িতে রাধুনীর কাজ জুটে যায় সেই বাড়ির লোক হাজারী ঠাকুরকে বেশ ভক্তি করত। বছর খানেক পর সে ছুটি নিয়ে বাসায় গেলে আর ফিরেনি বাড়িতে। নিজ গ্রামের অতসী ও কুসুমের নিকট হতে টাকা ধার নিয়ে হোটেল খোলে। বংশী’কে নেয় সাথে। বংশীর ভাগনে কে দেয় ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব। কয়েকদিনের মধ্যে হাজারির হোটেল খানা সর্বাধিক জনপ্রিয় হোটেল হয়ে উঠে। ওদিকে বেচু চক্রবর্তী ও যদু বন্দ্যোপাধ্যায়ের হোটেল বন্ধ হয়ে যায়। উপন্যাসের শেষ পর্যায়ে হাজারি একটি বড় হোটেল পরিচালনার চাকরি পান তিন বছরের জন্য। মাইনে একশত পঞ্চাশ টাকা। যাওয়ার আগে হাজারি তার মেয়ে টেপি’কে বংশীর ভাগনের কাছে বিয়ে দিয়ে তাকে রেলওয়ের হোটেলের দায়িত্বে রেখে যান। যেটা তার ছিল দীর্ঘদিনের ইচ্ছা। সেই সাথে বেচু চক্রবর্তী ও পদ্মঝি’কে তাঁদের রেল বাজারের হোটেলে চাকরি দেন।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত আদর্শ হিন্দু হোটেলের একটুখানি ইতিহাস আছে। সময়টা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তিনি একগ্রামের পথে হাঁটারত অবস্থায় তার সাথে দেখা হয় এক লোকের। সহজসরল এক ব্যাক্তি। হাতে পুঁটলি নিয়ে হাটছেন। তার সাথে দেখা হলে অনেক কথা হয় সেই লোকের সাথে। তিনি শুনান তাকে তার জীবন বৃত্তান্ত।

বিভূতিভূষণের আমার এমনই এক প্রিয় লেখক যার লেখা দেখলে না পড়ে থাকতে পারিনা। এক পড়ায় শেষ করে দিতে ইচ্ছা করে। কিন্তু শেষ হলেই মনে হয় – হল কেন এত তাড়াতাড়ি শেষ! তার লেখার ধরণ, লেখার ধাঁচ এতটাই দারুণ আর সুখকর যে অবাক না হয়ে পারিনে। তৃপ্তিতে ভরে যায় হৃদয়। কিন্তু মজার বিষয় “আদর্শ হিন্দু হোটেল” উপন্যাসটি পড়ার পর সাধারণ পাঠকের মনে বিশ্বাস জন্মে গেছিল হয়ত লেখক কোনো কালে হোটেলের ব্যবসা করেছিলেন।